Header Ads

পরিবেশ সংরক্ষনে পরিবেশ মনোবিজ্ঞানীর ভূমিকা


পরিবেশ বলতে আমাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে বোঝায়। যার অর্ন্তভূক্ত হলো মাটি, পানি, বায়ু, গাছপালা, সামাজিক রীতিনীতি, ঐতিহ্য, কৃষ্টি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি নিয়ে পরিবেশ গঠিত। পরিবেশে জড় পদার্থ ও জীব দুটিরই উপস্থিতি থাকে। জীব ও জড় পদার্থের সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জীবের স্বাভাবিক বিকাশধারা নিশ্চিত করার প্রক্রিয়াই হচ্ছে পরিবেশ সংরক্ষণ। সাধারণভাবে বলতে গেলে, পরিবেশ সংরক্ষণ বলতে এমন একটি অবস্থাকে বুঝায় যেখানে মানুষ, অন্যান্য প্রাণী ও উদ্ভিদের স্বাভাবিক বিকাশধারা নিশ্চিত হয়। পরিবেশ সংরক্ষনে পরিবেশ মনোবিজ্ঞানীদের কতগুলো ভূমিকা পালন করতে হয়। নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হলঃ

জীববৈচিত্র সংরক্ষণঃ প্রাকৃতিক পরিবেশে উদ্ভিদ, প্রাণী ও আনুবীক্ষণীক জীব সমূহের পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে যে বাস্তুতন্ত্র গড়ে উঠে, সে বাস্তুতন্ত্রে অগণিত জীব প্রজাতির সমাবেশকে জীববৈচিত্র্য বলে। জীববৈচিত্র্য পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এক আমূল্য সম্পদ। মানব সমাজে যেমন মানুষ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থেকে সমাজকে টিকিয়ে রাখে ঠিক তেমনি জীববৈচিত্র্যের সকল জীব নিজ নিজ ভূমিকা পালনের মাধ্যমে জীববৈচিত্র্যকে টিকিয়ে রাখে। মানুষের দ্বারা জীবৈচিত্র্যের কোন ক্ষতি সাধিত হলে তা যেমন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে ঠিক তেমনি মানুষের অস্তিত্বও হুমকির মুখে পড়ে। তাই জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে পরিবেশ মনোবিজ্ঞানীগণ জীববিজ্ঞানীদের সাথে যৌথভাবে কাজ করে থাকে।

 জনসচেতনতা বৃদ্ধিঃ আমাদের দেশে এমন অনেক মানুষ আছে যারা জানে না কীভাবে তারা নিজেরাই নিজেদের পরিবেশ দূষিত করছে এবং পরিবেশের ক্ষতি করছে। অথবা পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে তারা জানলেও এর পরিণাম সম্পর্কে তারা জানে না। তাদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মনোবিজ্ঞানীদের বিভিন্ন কার্যক্রম ও পরিকল্পনা গ্রহন করে থাকে।

 পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রনঃ আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তাই হচ্ছে আমাদের পরিবেশ। প্রাচীন কাল থেকে মানুষ যতই সভ্য হতে শুরু করেছে ততই তারা পরিবেশকে দূষণ করে চলেছে। এই পরিবেশ দূষণের ফলে পরিবেশের যতটুকু ক্ষতি হচ্ছে তার চেয়ে বেশি মানুষসহ অন্যান্য জীবের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাস্তবিক অভিজ্ঞতা থেকে আমরা যেসব পরিবেশগত দূষণ দেখতে পাই সেগুলো হলো বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, মাটি দূষণ, শব্দ দূষণ ইত্যাদি। এসব পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রনে পরিবেশ মনোবিজ্ঞানীগণ মানুষদের দূষণের কুফল, ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জ্ঞাত করে থাকেন। এবং পরিবেশ সম্পর্কিত বিভিন্ন নীতিমালা ও আইন প্রণয়নে পরিবেশবিদ ও আইনপ্রণেতাদের সহায়তা করেন।

 বনায়নঃ বন জীববৈচিত্রের বাস্তুতন্ত্রের একটি অন্যতম কেন্দ্র। জীববৈচিত্র্যের জীবদের অভয়াশ্রম হিসেবে কাজ করে এই বন। এমনকি পরিবেশ অনুকূল আবহাওয়া গঠনে সহায়তা ও প্রাকৃতিক দূযোর্গ থেকে মানুষকে রক্ষায় বন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বনের ক্ষতি সাধিত হলে পরিবেশেরও ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই পরিবেশ মনোবিজ্ঞানীগণ পরিবেশ সংরক্ষনে বনায়ন ও বনায়নের সুব্যবস্থাপনায় সকলকে উদ্বুদ্ধ করেন।

 

প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাঃ পৃথিবীতে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক সম্পদ থাকলেও তবে তা অসীম নয়। এগুলো কোন একদিন শেষ হয়ে যাবে। প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না করলে পরবর্তীতে এর জন্য মানুষকেই ভুগতে হবে। প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হয় ঠিক তেমনি মানুষেরও অর্থনৈতিক সাশ্রয় হয়। প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবস্থাপনায় পরিবেশ মনোবিজ্ঞানী নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহন করে থাকেন

·        প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় রোধে সচেতনতা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করেন।

·        প্রাকৃতিক সম্পদের পরিবর্তে নবায়নযোগ্য সম্পদ ব্যবহারে উদ্ধুদ্ধ রেন

·        প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে তৈরি কোন বস্তুকে পুনঃ প্রক্রিয়াকরণ করা গেলে তা পুনঃ প্রক্রিয়াকরন করে ব্যবহার করতে উদ্ধুদ্ধ করেন।

 

পরিবেশ সম্পর্কিত নীতিমাল প্রণয়নঃ আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তা নিয়েই আমাদের পরিবেশ। এই পরিবেশের অনেক উপাদানই আমরা প্রতিনিয়ত ব্যবহার করছি। যার ফলে ক্রমেই পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় ভূমি, পানিসম্পদ ও প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারে সমন্বয় সাধনের জন্য দেশের সরকারকে বিভিন্ন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা উচিত। এসব নীতিমালা প্রণয়নে দেশের সরকারকে সহযোগীতা করে থাকেন।

 

দূর্যোগ ব্যবস্থাপনাঃ দূযোর্গ বলতে সাধারণত মানুষের জীবন, সমাজ ও পরিবেশে সৃষ্ট অস্বাভাবিক অবস্থাকে বোঝায় যা মানুষের ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। দূযোর্গ প্রধানত প্রকার। যথাঃ

·        প্রাকৃতিক দূযোর্গ

·        মানবসৃষ্ট দূযোর্গ

কেবল দূযোর্গ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দূযোর্গ মোকাবিলা করা সম্ভব। দূযোর্গ ব্যবস্থাপনা হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে পর্যবেক্ষন ও বিশেষনের মাধ্যমে দূযোর্গ-প্রতিরোধ, দূযোর্গ মোকাবেলার পূর্ব প্রস্তুতি, দূযোর্গে সাড়াদান ও পূনরুদ্ধার সহ ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। দূর্যোগ মোকাবেলায় পরিবেশ মনোবিজ্ঞানীগণ উদ্ধারকর্মীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করেন এবং দূর্যোগে পড়া ব্যক্তিদের মানসিক ও সামাজিক সহায়তা প্রদানে ব্যবস্থা করেন।  

 পরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়নের নকশায়নঃ উন্নত জীবন যাপনের জন্য অধিকতর সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন নির্দিষ্ট এলাকাকে নগর বলে। আর এই নগর গড়ে উঠার প্রক্রিয়াকে নগর বলে। অন্যদিকে মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রী উৎপাদন বা তৈরির জন্য বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কলকারখানা স্থাপনকে শিল্পায়ন বলে। নগরবিদ ও শিল্পাঞ্চল তৈরির সাথে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞ ব্যক্তিদের সাথে পরিবেশ মনোবিজ্ঞানী দলগতভাবে কাজ করবেন যেখানে নগর ও শিল্পাঞ্চল স্থাপনের পরিকল্পিত নকশা প্রণয়ণের ফলে মানুষ, প্রাণী ও উদ্ভিদের স্বাভাবিক বিকাশধারা নিশ্চিত হয়।

 

বর্জ্য ব্যবস্থাপনাঃ জীব যেখানে বসবাস করে সেখানে অবশ্যই বর্জ্য তৈরি হবে। এ বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা হলে তা পরিবেশে থাকা সকল জীবের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পরিবেশ মনোবিজ্ঞানীগণ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে যৌথভাবে কাজ করে থাকেন।



1 টি মন্তব্য:

  1. লাস্টে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্যারাতে ভুল আছে। সেখানে হবে - সঠিক ভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না করা হলে।

    উত্তরমুছুন

RBFried থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.