Header Ads

পরার্থপরতা কী | পরার্থপরতার উপর প্রভাব বিস্তারকারী উপাদানসমূহ

 


উনবিংশ শতাব্দির প্রখ্যাত ফরাসি দার্শনিক অগাস্ট কোঁৎ সার্থপরতা বিরোধী শব্দ হিসাবে “অল্ট্রুইজম” (Altruism) শব্দের ব্যবহার করেন। যার পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে পরার্থবাদ। পরার্থবাদ মনোবিজ্ঞানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। পরার্থবাদ হচ্ছে সেই নীতি বা প্রথা যা অন্যের কল্যাণের সাথে সম্পর্কযুক্ত। পরার্থবাদ থেকে পরার্থপরতা শব্দটি এসেছে। পরার্থপরতার সহজ আভিধানিক অর্থ হচ্ছে পরোপকারীতা। নিজের চেয়ে অন্যের প্রয়োজনকে সবসময় বড় করে দেখা এবং প্রয়োজনে নিজের স্বার্থ ত্যাগ করার প্রবণতাই হল পরার্থপরতা। অর্থাৎ অন্যের জন্য দুঃখ কষ্ট সহ্য করা বা ত্যাগ স্বীকারের মনোভাবই হচ্ছে পরার্থপরতা। পরার্থপরতা এমন এক ধরনের সাহায্য যা ব্যক্তি নিঃস্বার্থবানভাবে করে। বিনিময়ে কোন লাভ বা পুরস্কারের আশা করেন না। পরার্থপরতা সাধারণত সংকট কালীন দেখা যায়। যেমন, বন্যা বা ভূমিকম্পের পরে লোকরা সহজেই দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্য করতে শুরু করে।

পরার্থপরতা উপর প্রভাব বিস্তারকারী উপাদানঃ

পরার্থপরতা আরেকটি প্রতিশব্দ হচ্ছে পরোপকার করা। কোন ব্যক্তি পরোপকার করবে কি করবে না সেটা নিতান্তই তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে মানুষ বিভিন্ন কারণে পরোপকার বা সাহায্য করে থাকে। পরোপকারী হওয়ার ক্ষেত্রে মানুষের উপর বিভিন্ন উপাদান প্রভাব বিস্তার করে থাকে। পরার্থপরতার উপর প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান সমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলঃ

 

সাহায্য করার সক্ষমতাঃ পরার্থপরতা বা সাহায্য করার প্রকিয়াটি শুরু হয় অন্য কোন ব্যক্তির চাহিদা সম্পর্কে জানার মাধ্যমে। এটি তখনই ঘটে যখন ব্যক্তি অন্য কাউকে সংকটময় পরিস্থিতিতে দেখেন। চাহিদা সম্পর্কে জানার পর ব্যক্তি চিন্তা করে যে নিজে সাহায্য করতে সক্ষম কিনা। উদাহরণস্বরূপ একজন পুরুষ গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে তিনি একজন মহিলাকে দেখেন যার গাড়ির ইঞ্জিন কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। পুরুষ লোকটি তাকে সাহায্য করতে ইচ্ছুক হতে পারে কিন্তু যদি তার ইঞ্জিনের সমস্যা সমাধানের দক্ষতা না থাকে তাহলে তিনি সাহায্য করতে পারবেন না। তবে, প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন কোন লোক যদি এমন পরিস্থিতি দেখেন তাহলে তিনি চাইলে সাহায্য করতে পারেন। সুতরাং সাহায্য করার সক্ষমতা না থাকলে পরোপকার/পরার্থপরতা সম্ভব নয়।

ধর্মীয় মূল্যবোধঃ ধর্ম শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হচ্ছে যা ধারন করে মানুষ জীবন যাপন করে। আর মূল্যবোধ হলো মানুষের আচরণ পরিচালনাকারী নীতি ও মানদন্ড। অর্থাৎ যে আচরণ পরিচালনাকারী নীতি ও মানদন্ড ধারন করে মানুষ জীবন যাপন করে তাই হচ্ছে ধর্মীয় মূল্যবোধ। পৃথিবীতে বিদ্যমান সকল ধর্মেই মানবিক গুণাবলিকে স্থান দেওয়া হয় এবং পাশবিক বৈশিষ্ট্যকে বর্জন করা হয়। সকল ধর্মেই মানবিক গুলাবলিকে পূণ্য হিসাবে ধরা হয় এবং পাশবিক বৈশিষ্ট্যকে পাপ হিসাবে ধরা হয়। পরার্থপরতা বা পরোপকার একটি মানবিক গুন। ধর্মীয় দিক থেকে এটি একটি পূণ্যবান কাজ হওয়ায় মানুষ পরার্থপরতার দিকে আকৃষ্ট হয়। তাই বলা যায় ধর্মীয় মূল্যবোধ পরাথপরতার উপর প্রভাব বিস্তার করে।

মুহূর্ত বা সময়ঃ বিভিন্ন মূহূর্ত নির্ধারন করে যে ব্যক্তি ব্যক্তির সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ব্যকি পরোপকার/সাহায্য করবে কিনা। যেমন, কোন একজন বৃদ্ধ শহরে এসে তার আত্মীয় বাসার ঠিকানা খুঁজে পাচ্ছে না। অন্যদিকে অপর একজন তরুণ ঐ বৃদ্ধের আত্মীয়ের বাসা চিনেন এবং তিনি বৃদ্ধ লোকটিকে সাহায্য করতে পারেন। ‍কিন্তু তরুণ লোকটি যদি আরো গুরুত্বপূর্ণ কাজের উদ্দেশ্যে রওনা হন তবে এই পরিস্থিতিতে তার বৃদ্ধকে সাহায্য করার সম্ভাবনা কম।

স্থান বা পরিস্থিতির প্রকৃতিঃ এমন এক পরিস্থিতি যেখানে সাহায্য করার মত অনেক লোক আছে বলে মনে হচ্ছে, সেখানে কোন ব্যক্তি সাহায্য করার জন্য কম অনুপ্রাণিত বোধ করতে পারে। কেননা তারা ভাবতে পারেন যে, অন্য কেউ অবশ্যই সাহায্য করবে। উদাহরণস্বরূপ, একটি জনবহুল শহরে কোন ব্যক্তি গাড়ি নষ্ট হওয়ার পর সাহায্যের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন, সেখানে তার সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনা কম। কেননা সাহায্য করতে সক্ষম ব্যক্তিরা মনে করতে পারে যে বিপদে পড়া ব্যক্তিকে অবশ্যেই কেউ সাহায্য করবে। অন্যদিকে এমন পরিস্থিতি যেখানে সাহায্য করার মত কম লোক আছে বলে মনে হচ্ছে, সেখানে কোন ব্যক্তি সাহায্য করার জন্য বেশি অনুপ্রাণিত বোধ করতে পারে। কেননা তারা ভাবতে পারেন যে, ক্ষতিগ্রস্থ লোকটির সমস্যা সমাধানের সময় দীর্ঘায়িত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একটি কম জনবহুল শহরে কোন ব্যক্তি গাড়ি নষ্ট হওয়ার পর সাহায্যের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন, সেখানে তার সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কেননা সাহায্য করতে সক্ষম ব্যক্তিরা মনে করতে পারে যে বিপদে পড়া লোকটিরসমস্যা সমাধানের সময় দীর্ঘায়িত হতে পারে।

মেজাজ এবং ব্যক্তিগত পরিস্থিতিঃ একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত পরিস্থিতি এবং মেজাজ উপর নির্ভর করে সে অন্য কাউকে সাহায্য করবে কি করবে না। উদাহরণস্বরূপ যদি একজন ব্যক্তি নিজে কিছু ব্যক্তিগত সমস্যায় আটকা পড়ে থাকেন, তাহলে তিনি সাহায্য করতে চাইলেও তার পক্ষে সাহায্য করা কঠিন হতে পারে। তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, ভাল পরিস্থিতিতে খোশ মেজাজের লোকরা সাধারণত অন্যদের তুলনায় পরোপকারী হয়ে থাকে এবং খারাপ পরিস্থিতিতে ও খারাপ মেজাজে থাকা লোকেরা সাধারণত অন্যদের তুলনায় কম পরোপকারী হয়ে থাকে।

উপর্যুক্ত উপাদানগুলোই পরার্থপরতার উপর প্রভাব বিস্তার করে।

কোন মন্তব্য নেই

RBFried থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.